NameWilson's Syndrome

Bangla

উইলসন ডিজিজ কি ও কেন হয়? প্রতিকার কি?

উইলসন ডিজিজ একটি বিরল উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ব্যাধি যা আপনার লিভার, মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতে তামা (Copper) জমা করে। উইলসন রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকের বয়স ৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হয়, তবে এটি অল্পবয়সী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদেরও প্রভাবিত করতে পারে।

তামা স্বাস্থ্যকর স্নায়ু, হাড়, কোলাজেন এবং ত্বকের রঙ্গক মেলানিনের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত, তামা আপনার খাদ্য থেকে শোষিত হয়, এবং আপনার শরীরের অতিরিক্ত তামা  যকৃত হতে নিঃসৃত পিত্তের মাধ্যমে আপনার শরীর থেকে বেড় হয়ে যায়। কিন্তু উইলসন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরের তামা সঠিকভাবে পরিশোধনের পরিবর্তে শরীরে জমে যায় যা জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করা হলে, উইলসন রোগ নিরাময়যোগ্য, এবং এই ব্যাধিতে আক্রান্ত অনেক লোক স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

 

    Wilson Disease.jpeg

 

লক্ষণ

উইলসনের রোগটি জন্মগত এবং অনেকে এই রোগ নিয়েই জন্মায়, তবে মস্তিষ্ক, লিভার বা অন্যান্য অঙ্গে তামা জমা না হওয়া পর্যন্ত এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি দেখা যায় না।এই রোগ দ্বারা আপনার শরীরের কোন অংশ আক্রান্ত হয়েছে, এই রোগের উপসর্গের মাত্রা এবং ধরন কেমন হবে তা নির্ভর করে আপনার শরীরের আক্রান্ত অংশের উপর। এই রোগে সাধারণত নিন্ম লক্ষণ সমূহ দেখা যায়ঃ

  • ক্লান্তি,
  • ক্ষুধার অভাব বা পেটে ব্যথা
  • ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস)
  • সোনালি-বাদামী চোখের বিবর্ণতা (Kayser-Fleischer rings)
  • পা বা পেটে তরল জমা হওয়া
  • কথা বলতে, খাবার গিলতে বা শারীরিক সমন্বয়ের সমস্যা
  • অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া বা পেশী শক্ত হওয়া

 

এই রোগের কারণ

উইলসনের রোগটি একটি অটোসোমাল রিসেসিভ বৈশিষ্ট্য যা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া যায়, যার অর্থ এই রোগটি বিকাশের জন্য আপনাকে অবশ্যই পিতা এবং মাতা  উভয় থেকে ত্রুটিপূর্ণ জিনের একটি করে কপি উত্তরাধিকারসূত্রে পেতে হবে। আপনি যদি শুধুমাত্র একটি অস্বাভাবিক জিন পান তবে আপনি নিজে অসুস্থ হবেন না, তবে আপনি এই রোগের একজন বাহক এবং পরবর্তীতে এই অস্বাভাবিক জিনটি আপনার বাচ্চাদের কাছে যেতে পারে।

 

ঝুঁকির কারণ

আপনার পিতামাতা বা ভাইবোনদের এই রোগ থাকলে আপনি উইলসন রোগের ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। আপনার উইলসন রোগ আছে কিনা তা জানতে আপনার জেনেটিক পরীক্ষা করা উচিত কিনা তা আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন। দ্রুত রোগ নির্ণয় এই রোগ থেকে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

 

জটিলতা

সময়মতো এই রোগের চিকিৎসা না করলে নিম্নলিখিত জটিলতা হতে পারে:

  • লিভার সিরোসিসঃ অরিতিক্ত তামা জমা হওয়ার ফলে লিভারে দাগযুক্ত টিস্যু তৈরি হয় যা লিভারের কাজ করা আরও কঠিন করে তোলে।
  • যকৃতের অকার্যকারিতা (Liver Failure): এটি হঠাৎ করে হতে পারে অথবা কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে বিকশিত হতে পারে। এই ক্ষেত্রে আপনাকে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হতে পারে।
  • ক্রমাগত স্নায়বিক সমস্যাঃ কম্পন, অনৈচ্ছিক পেশী নড়াচড়া, চলাফেরা এবং কথা বলার অসুবিধা সাধারণত উইলসন রোগের সাথে সম্পর্কিত। তবে উইলসন রোগের চিকিত্সার মাধ্যমে এই সমস্যা সমূহের উন্নতি হতে পারে।যাইহোক, কিছু লোকের চিকিত্সা সত্ত্বেও ক্রমাগত স্নায়বিক সমস্যা রয়ে যায়।
  • কিডনির সমস্যাঃ উইলসন রোগ কিডনির ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে কিডনিতে পাথর এবং প্রস্রাবে অস্বাভাবিক সংখ্যক অ্যামিনো অ্যাসিড নির্গত হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
  • মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাঃ ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, বিষণ্নতা, বিরক্তি, বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা সাইকোসিস মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে।
  • রক্তের সমস্যাঃ লোহিত রক্তকণিকা (হেমোলাইসিস) ধ্বংস হয়ে রক্তস্বল্পতা এবং জন্ডিস হতে পারে।

 

মনে রাখবেন, দ্রুত রোগ নির্ণয় এই রোগ থেকে সেরে উঠার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।